দশটি কবিতা

কবিতা

দশটি কবিতা

-সেলিম মিয়া


কোন আকাশে কোন বাতাসে মন আমার ভেসে চলে যায়।

সেই শ্রাবণ ঘন মেঘের আড়াল ভেঙে মন ছুটে চলে যায়॥

আজ ঝর্ণা থেকে নদী হয়ে সাগরে মিশেছি,

দিনের শেষে বাতাস হয়ে আকাশে ভেসেছি।

সেই উচ্ছ্বাসে মন যেন হারিয়ে গেলো দূর অজানায়॥

আকাশে যখন রাত্রি হলো–  হয়ে গেলাম তারা,

পৃথিবী তখন জানে না আমায় আমি যে বাঁধনহারা।

রাত শেষে ভোর হলে ফিরি তবু প্রাণের ছোঁয়ায়॥

তুমি আমার মনেই ছিলে বহুদিন ধরে অনেক যতন করে।

তাই তো ক্ষণিক দেখাই রাখলো তোমায় চিরদিনের করে॥

পথে নাই-বা আর দেখা হলো,

দিনের আলো নিভে গেলো।

তবু রাতে তোমার মুখের ছবি জ্বলবে আরো উজল করে॥

রুদ্র রেখায় রৌদ্র লেখা

থাকলো নয় হৃদয়ে আঁকা

তবু নীরবতা মুখর হয়ে থাকবে আমার নয়ন ভরে॥

আমার এ গান দোয়েলের গান

তোমরা শোনো আর নাই বা শোনো।

আমার এ প্রাণ পলিমাটির প্রাণ

তোমরা ঘ্রাণ পাও আর না পাও কোনো॥

এখানে কোকিল শ্যামা পাপিয়া হয়ে,

চিরদিন আনমনে যাবো গান গেয়ে।

পাতা ঝরার নীরব সুরে দূর বনে কখনো॥

এখানে পদ্মা মেঘনা যমুনার জলে

যাবো ভেসে দূর দেশে হেসে আর খেলে।

অস্তগামী হলে রবি সে আলোয় তখনো॥

হারানো দিনের মেদুর বরষায়,

তুমি চলে গেলে কী ভেবে হায়।

মন তাই কাঁদে আজো নিরালায়॥

ফেলে আসা পথ ধরে সেই নদীর তীরে,

স্মৃতির ভুবনে মন যায় বারেবারে।

বরষার ভরা নদী শুকিয়ে যায়

অশ্রু জলে চোখের নদী যায় ভিজে যায়॥

পথে ফোটা কেয়া কদম পথেই যায় ঝরে,

পলকে ঝলকে কেউ দেখে ভুল করে।

হাওয়ায় ভাসা গন্ধ ফুরিয়ে যায়,

মন কেন তবু সেখানেই হারায়॥

কষ্ট করে কষ্ট কিনতে আমি আর আসবো না।

ভালবাসার যে দাম পেয়েছি তা দিয়ে ভালবাসা যায় না॥

অনেক দরে সদাই করে নাম লেখালাম ক্ষতির খাতায়,

ফিরে এলাম তুলে নিয়ে শুন্য খাঁচি মাথায়।

নানা সাজে পসরা সাজিয়ে তুমিই করো বেচাকেনা॥

ভুবন জুড়ে কি এমনই করে ভালবেসে কাঁদতে হয়,

পাওনাদারের উপরি পাওনা কষ্টই শুধু রয়।

যে আসে প্রয়োজন মেটাতে সে-ই যে শেষে ফেলনা॥

দুখিনী মাগো! কতদিন দেখি না তোমায়

দুখিনী মায়ের কোল তবুও কত শান্তি যে।

কোথাও কি আছে এমন এ বিশ্বমাঝে॥

ফুলেরও কাঁটা থাকে প্রিয়ার দেয়া ব্যথা থাকে,

নিজের সব ব্যথা ভুলে আমায় যে আগলে রাখে

সে শুধু মা জননী প্রমাণ তার সকল কাজে॥

লঘু ভুলে যখন সবাই দেয় অভিশাপ,

ঐ গুরু পাপেও তখন কে করে মাফ?

সে শুধু মা জননী  সকাল-দূপুর-সাঝে॥

সূর্য নয় চাঁদ নয় তোমায় আমার আলোয় দেখি।

চোখ নয় বুক নয় তোমায় হৃদয় গভীরে রাখি॥

আসন পেতে আছো বসে সোনার মহলে,

কৃষ্ণচূড়ার পাতার মতো ঝরঝরে চুল খুলে।

ঈশারা নয় ভাষা নয় তোমায় প্রাণের সুরে ডাকি॥

আঁধার চিরে ফুটে উঠে আলোর যে আভাস,

আমার জীবন জুড়ে সে তোমারই প্রকাশ।

রং নয় কথা নয় তোমায় ধূসর মৌনতায় আঁকি॥

টাকাকেই চিনলে পৃথিবী মানুষকে আজো চিনলে না।

মানুষের চেয়ে দামি করলে চুনি-পান্না॥

অর্থের পিছে ঘুরে ঘুরে জীবন করেছো অর্থহীন,

বিপন্ন মানবতার করুণ আকুতি দলেছো দয়াহীন।

সোনার জন্যই ভাবলে মানুষ–  মানুষের জন্য নয় সোনা॥

বিত্তের বৃত্তে নিজেকে রেখে বাহিরে সেজেছো অন্ধ,

স্বার্থের গায়ে কণাটুকু আঁচড়ে দুয়ার করেছো বন্ধ।

মণি-মুক্তা-কাঞ্চণ হয়েছে বড় আপন মানুষ যেন ফেলনা॥

চাঁদ হারালে মেঘের আড়ালে মন তুমি যেন কেঁদো না।

ফেরারী মন ফিরে না এলে কষ্টের ভীড়ে চাপা পড়ো না॥

যাবো না যে ফাগুনের ঐ আগুন বনে,

নিরন্তর এই বাজলে বাঁশি খেইহারা জীবনে।

অনেক আশায় ভাসানো তরীর হাল ছেড়ে দিও না॥

ফুটি করে যে ফুল ফোটেনি এখনো,

ফুটবে কি ফুটবে না সে জানেনি কেউ কখনো।

অনেক অপেক্ষায় ফোটানো মুকুল তবু ছিড়ে ফেলো না॥

১০

মেঘে মেঘে রোদ হাসে

পাহাড় ’পরেও ছড়ায় রেশ

এ আমার দেশ আলো-ছায়ার বাংলাদেশ।

নদী তীরে কলসি কাঁখে

কোন সে বধূর এলো কেশ

এ আমার দেশ নদী ও নারীর বাংলাদেশ॥

নেচে নেচে গেয়ে বেড়ায় পাখি সব

ফাঁকে ফাঁকে কোকিল তোলে কুহু কুহু রব।

ধানে ধানে রোদ-ছায়ায়

ফড়িং এসে খেলে বেশ

এ আমার দেশ পাখ-পাখালির বাংলাদেশ ॥

গাছে গাছে পাতার ফাঁকে ফোটে যে ফুল

বাতাস তারই সুবাস ছড়ায় হয়ে মশগুল।

পথে পথে মুগ্ধতার

বাজে যেন সুর অশেষ

এ আমার দেশ সুর-সুরভির বাংলাদেশ ॥


Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*