দশটি গীতিকবিতা
-সেলিম মিয়া
১
কে বলে মা তোমায় গরীব, কে বলে তোমায় নিঃস্ব।
তোমার কত রতন আছে, জানে না তো সে বিশ্ব॥
তোমার ছায়ায় তোমার মায়ায়
বারে বারে পরাণ জুড়ায়
তোমার ফুলে তোমার ফলে
তোমার কাদা-মাটি-জলে
কোথায় এমন সোনালী রূপ, কোথায় শ্যামল শস্য॥
তোমার গানে তোমার সুরে
নাচি সবাই হৃদয় জুড়ে
তোমার মুখে তোমার বুকে
সবাই মোরা মাথা ঠেকে
শিশুর মতো ঘুমিয়ে যাই, দুঃখ করি ভস্ম॥
২
দিন রাত এই ফুটপাথ
আমার বাহির আমার ঘর।
আপন যারা নেই তারা
সব হয়েছে পর।।
কতো জনের পায়ের ধূলি ঝরে
শীর্ণ কালো এই গায়ের ’পরে।
নিতে শোধ আসে রোদ
আসে কতো বৃষ্টি-ঝড়॥
এতো অনাদর আর অবহেলা
শুধু বাঁচার জন্য সবই ভোলা।
এ জীবন বিস্মরণ
যেন জীবন্ত কবর॥
তবু দিনের সকল কষ্ট শেষে
রাতের দু’চোখে ঐ স্বপ্ন ভাসে-
জুটবে ভাত জুড়ে পাত
আমার বাকি জীবন ভর॥
৩
কেন তুমি ঘুমঘোরে করো আসা-যাওয়া।
কেন বা তোমার এই স্বপ্ন-তরী বাওয়া॥
সন্ধ্যাতারার দৃষ্টি দিয়ে
দেখি তোমায় অবাক হয়ে
স্বপ্নবিধুর গন্ধ মেখে কেন বয় সজল হাওয়া॥
অস্ত রবির পরশ নিয়ে
আমার আকাশ যাও রাঙিয়ে
ক্ষণিকের রঙে কেন চিরদিনের করে চাওয়া॥
৪
কে তুমি এলে গো ভোরের স্বপনে
আর কিছুক্ষণ থেকে যাও আমার নয়নে॥
ঐ এখনো তো হয়নি সকাল
চলো আরো বুনি স্বপ্নের জাল।
ডানা মেলে উড়ে বেড়াই
মেঘেদের সনে
পাখিদের সনে॥
সব ঘুমে মেলে না এমন স্বপন
সব ঘোরে মজে না মন অমন।
তাই হেসে খেলে গেয়ে যাই
শুধু দুজনে
এই নিরজনে॥
৫
জন্ম মোর কুঁড়ে ঘরে
তবু স্বপ্ন দুচোখ ভরে-
সত্যিকারের মানুষ হবো
হাজার মানুষের ভীড়ে॥
যখনই ক্ষুধায় যাই যে মরে
থেকে থেকে প্রাণ ওঠে নড়ে।
পানি খেয়ে পেটটি ভরে
ইচ্ছে তবু রাখি ধরে॥
চৌধুরীদের ঐ আমবাগানে
ছেলেরা মাতে খেলায় গানে।
তাদের সাথে খেলার তরে
মন যে মোর কেমন করে॥
দাঁড়াবো একদিন নিজের পায়ে
স্বপ্নরে মোর রাখবো বাঁচায়ে।
মনে মনে শপথ করে
দিনের মতো যাই সরে॥
সোনালী দিনের আহবানে
ঐ রঙিন আশার পথের টানে-
ভুলি কতো বৃষ্টি পড়ে
খড়ের ঐ চালটি ফুঁড়ে॥
৬
(পুরুষ কণ্ঠ)
ও পারের মাইয়া তুই কী গান গাইয়া
মন নিলি পরাণ নিলি, দিলি সব ভুলাইয়া।
রূপের আগুন দিয়া আরও পোড়াইলি অন্তর
ধড়ফড় ধড়ফড় কইরা ওঠে কলিজার ভেতর
ঘরে বাইরে এক নজরে থাকি উদাস চাইয়া।।
রাইতে এখন স্বপন হইয়া থাকিস চোখের পাতায়
দিনের বেলায় ঘুর-ঘুর-ঘুর সুর তুলিস কথায়।।
তোরে লইয়া থাকি বইয়া সব কাম থুইয়া।।
(নারী কণ্ঠ)
ও পারের নাইয়া তুই কী নাও বাইয়া
মন নিলি পরাণ নিলি, দিলি সব ভুলাইয়া।।
পালে হাওয়া দিয়া আরও কাঁপাইলি অন্তর
ধড়ফড় ধড়ফড় কইরা ওঠে কলিজার ভেতর
ঘরে বাইরে এক নজরে থাকি উদাস চাইয়া।।
রাইতে এখন স্বপন হইয়া থাকিস চোখের পাতায়
দিনের বেলায় ঘুর-ঘুর-ঘুর সুর তুলিস কথায়।।
তোরে লইয়া থাকি বইয়া সব কাম থুইয়া।।
৭
চলরে আজ সবাই মিলে
ধুমসে খেলা করি।
লাউয়ের ডগায় আর কলমি লতায়
ফড়িংয়ের সাথে নেই আড়ি।।
বাঁশবনের ঐ কঞ্চি ধরে
দুলি সবে চল প্রাণ ভরে।
আর পাখির সুরে গান ধরি
চুলোয় যাক সব– ধুত্তরি॥
শিশির মাখা দুর্বা ঘাসে
স্মরণ সিনহার মুখ হাসে।
সেই হাসিতে গড়ে পড়ি
আহা কী মরি মরি॥
কাশবনের ঐ সাদা হাসি
নদীর তীরে বালুর রাশি
গায়ে মেখে তাড়াতাড়ি
ওরে চল সব মন ভরি॥
৮
চাঁদের আলো গড়িয়ে পড়ে
নারিকেল গাছের শাখায়।
লক্ষী পেঁচাও ডাকছে দূরে
আয়রে তোরা আয়
আয় খোকা আয়
আয় খুকু আয়॥
শিয়াল মামা ঐ ডাকছে সুরে
ঘুরতে যাবি কে দূর-প্রান্তরে।
উড়বি কে আরো পঙ্খিরাজের পাখায়॥
বাঁধন ছিড়ে আয়রে দল বেঁধে
বাঁধবি যদি তোর স্বপন সিধে
সত্যি তাই কর আজ যা দেখিস কল্পনায়॥
৯
কেন সেই মুখ আজো মনে পড়ে
মনের ভেতর মনকে ব্যাকুল করে॥
চোখের সেই কথা যদি
চোখের জলে গড়ে নদী
কেন তবে নিরবধি
বসে থাকি তীরে॥
হাতে তার রেখে দু’হাত
কেটে গেছে কত যে রাত
আমায় তবু করে আঘাত
গভীর আধাঁর ঘরে॥
১০
হিন্দু খ্রিস্টান বৌদ্ধ মুসলমান
সকলের এ দেশ সকলের গৌরব সকলের সম্মান॥
ছোট হোক বড় হোক, হোক মুচি হরিজন
সবার আছে অধিকার আছে প্রয়োজন।
তার উপরে মানুষ সবে একই মাটির সন্তান॥
ধরম নয় বরণ নয়, নয় কোন সে আচার
আরো সত্য বিধান আছে এক বাঁচার।
যার মরমে আছে গাঁথা মোরা সবাই সমান॥
Be the first to comment