গীতিকবিতা
–সেলিম মিয়া
১
যা চাই যাচাই করিনি তা-ই
নকলকে আসল ভেবে বয়ে গেলাম ভাই।
হাতের কাছে ফেলে মানিক
ভুবন ঘুরে পেলাম খানিক
কিছুটা তার হলো সঠিক
বাকিটা যে ছাই।
জানাই আমার যা নাই॥
ভাঙলো যখন ভুলের বেড়ি
পাগলা ঘোড়া এলো তেড়ি’
(ওরে) আর কি সে করে দেরি
বলে- তোরে চাই।
যা গাই তা গেয়ে জাগাই॥
২
জন্মেই তুমি দিয়েছ ঠাঁই মরণেও যেন তাই পাই
তোমার কোলের অমন শান্তি আমি হারাতে না চাই॥
এ জীবনে পেয়েছি যতো
ঝরণা-নদীর ধারার মতো
তোমার ধারার তেমন কান্তি কোথাও যে আর নাই॥
পৃথিবীতে এসেছি যখন
তখন থেকেই ক্লান্ত জীবন
আমার চলার এত ক্লান্তি তোমার পায়ে ঘোচাই॥
৩
চুপি চুপি কখন এসে
আমায় গেলে ভালবেসে
যেন তাই আকাশ জুড়ে
চাঁদ তারা ওঠে হেসে॥
মরু-প্রাণ নতুন করে
লতিয়ে ওঠে থরে থরে।
আসে মেঘ জলে ভরে
পূবের হাওয়ায় ভেসে ভেসে॥
সুখে প্রাণ নাচে আমার
নয়ন মেলে দেখে আবার।
ভিন্ন রূপ একই ধরার
সেজে আছে রঙিন বেশে॥
৪
শাওন সাঁঝে বুকের মাঝে
করুণ কী যে ব্যথা বাজে।
অস্তপারের সন্ধ্যাতারায়
তুমি খবর নিলে না যে॥
খানিক পরেই আঁধার হবে
চিরতরে তাই কি রবে।
ব্যস্ততারই অজুহাতে
তুমি বলে গেলে না যে॥
শাওন রাতের অঝোর ধারায়
অশ্রু আমার চোখেই হারায়।
কষ্টগুলো বয়ে চলে
ভুবন জুড়ে জলে ভিজে॥
৫
আমার ঘরে (২) কে এসেছে আজ
দেখরে তোরা নয়ন ভরে ফেলে সকল কাজ॥
দেখরে তার আঁখি দু’টি
কেমন রূপে ওঠে ফুটি’।
জানলার আলোয় আরো দেখরে রূপের ভাঁজ॥
তার গালের একটি তিলে
সকল কালো গেছে মিলে।
কাজল কালো কেশে তাই ঢাকে মধুর লাজ॥
৬
তুমি যে আমারই কত সাধনা সে তো জানো না
আঁধার এ জীবনে আলোর বাসনা সে কি মানো না॥
শাখায় শাখায় ফোটে যে কুসুম
সে তো গাছের শত রাত নির্ঘুম
হাজার প্রহরের নীরব যাচনা(২) সে কি বোঝো না॥
বাঁশি নিতুই তোলে যে সুর
অনেক কেঁদেই সে হয় মধুর
চোখের জল বিনা হৃদয়ের কান্না (২)সে কি শোনো না॥
৭
বেঁধো না তাকে বেদনায় সেধো না তাকে সাধনায়
তুমি সুখ যদি পেতে চাও বেসো না ভাল বাসনায়॥
তারে যদি পেতে চাও
ভালবেসে ছেড়ে দাও
পরম প্রেমে মনে মনে ঠিকই পাবে কামনায়॥
ফাগুন এলে মনে ঐ
তখন সে আর যাবে কই
দখিন হাওয়ায় উতল হবে সে যে তোমার ভাবনায়॥
৮
তুমি মনের সাথে আপোষ করে
বলো যাবে ওগো কতদূরে॥
যখন ফাগুন আসে মনে আগুন নিয়ে
তুমি নেভাবে তা বলো কোন জল দিয়ে।
সব গেলে বিফলে দেখবে অশ্রু ঝরে॥
নেশা ভরা চোখে ব্যথা ঝরা বুকে
তুমি গাইবে নাকি বলো সুখে-দুখে।
স্বপনে গোপনে গাইবে গুনগুন সুরে॥
৯
শোন গো প্রিয়তমা তুমি তো জানো না।
কাছ থেকে দূরে গেলে থাকে তোমার ভাবনা॥
সকাল দূপুর সাঁঝে নিত্য যে ব্যথা বাজে
রাত্রির কালো হয়ে থাকে সে বুকের ভাঁজে।
দিতে তাই আলো দীপ হয়ে জ্বলো
আঁধার ঘুচে যাক না॥
কাছে থাকো যতো পাই তোমায় মনের মতো
দূর এসে বাড়ায় ততো বেদনা অবিরত।
এলে যে বেশে মনের আবেশে
চিরতরে থাক্ না॥
১০
ও প্রেম বঁধুর কতই মধুর
বাজায় প্রাণে প্রাণের সুর॥
দিক বিদিক ছুটছে হাওয়া
আকুল মনে পরশ পাওয়া
ক্ষণেক পেয়ে চির চাওয়া
সেই বারতা জানায় সুদূর॥
আকাশ বাতাস ছুঁয়ে গেলে
নতুন গন্ধ দিলে ঢেলে
রঙে আরো সাজিয়ে নিলে
নেশায় রাঙা মাথার সিঁদুর॥
Be the first to comment