পাঁচটি কবিতা
-সেলিম মিয়া
১
ভুল আরাধনা
গুচ্ছ গুচ্ছ ছায়াপথ ঘুরে দেখি,
আকাশ আঙিনায় নক্ষত্রেরা
ব্রহ্মাণ্ডের কাম-রাঙা ফুল।
অথচ শুধু আলোকপিণ্ড ভেবেই আমি
একটা জীবন কাটিয়ে দিলাম।
আকাশগঙ্গার অভিসার ঘরে
বর্ণলিপি হাতে নিয়ে বর্ণসাধিকা বলেছে,
তার নিজের কোনও প্রিয় বর্ণ নেই
আর যাকে নীলিমা বলে ডাকি তারও প্রিয় রঙ কালো।
অথচ নীলকেই আমি আরাধ্য ভেবে এসেছি।
তৃণভূমিকে তীর্থভূমি ভেবে
আমার মতো হরিণেরাও
পাহাড়ে চরে বেড়ায় রোজ।
অথচ হরিণ নিজেও জানে না
তার ছাইয়ে গড়ে এই সব কস্তুরী পাহাড়।
২
রোদের রোদন কিংবা অবৈধ সংলাপ
আকাশের চিত্রপটে বিজলীরেখার মতো সরু অথচ সুতীব্র
অথবা শহর-রক্ষা বাঁধ ভাঙনের
প্রারম্ভিক ফাটলের মতো
সূক্ষ্ম কিন্তু ধারালো—হারাতে পারে যা নিমিষে,
হারায় না তবু যেন— শুধু বয়ে চলে অন্ধ শুশুক ধারায়,
জেনেছি তেমন অনুভবে—
নদীর শরীর ভাঙে জলের নিনাদে
রোদের রোদন তাতে বরফ-বিষাদ।
আমার সংসার ভাঙে অবৈধ সংলাপে
গোলাপের ঘ্রাণ তাতে বিষের বিস্বাদ।
৩
আকাশ শুনেছে তবে
সাদা সাদা রাজহংসী অবিন্যস্ত ওড়ে নক্ষত্রের অভিমুখে
পরিত্যক্ত বাড়ির মতন পড়ে থাকি এই আমি
অরণ্যের গভীরে (।) কোথাও জ্বলে বুকের বিষাদ
কোথাও পাতার অবসাদ—
ছাই রঙ, শুধু ছাই রঙ—যেন পাথরঘুমের শয্যা পেতে
শুয়ে আছে হৃদয়ের প্রেম।
শিয়রে চাঁদের অভিমান
নক্ষত্রের জানালায় ঝুলে থাকে আলোর সুঘ্রাণ।
আকাশ শুনেছে তবে রাজহংসীদের সব গান!
৪
ভালোবাসি সবচে’ আঁধার
বুকের বোতাম খুললেই ঢলে পড়ে গম্বুজাকৃতির চাঁদ
গুটিসুটি মেরে নুয়ে থাকা ধূমকেতু
অন্ধকারে উৎক্ষিপ্ত জোৎস্নার স্নানে,
আর কান পেতে শোনে আঙুলের গান,
রাতের কাহন, মহাকাব্যিক বয়ান।
রাতের অধরতটে গুঞ্জরিত ঢেউয়ের নাদ
ভূ-কম্পনে বেলাভূমি কাঁপে থরথর।
হৃদয়ের ধ্রুপদী সকল কথা ছড়ায় সৌরভ
জাকির হোসেন যেন তবলায় তুলছেন বোলের বৈভব।
দ্বৈত অবগাহনের এমন অমিয় স্বাদ
আস্বাদিত হয় আঁধারের জোৎস্নায়।
বুকের বোতাম খুললেই
মেলে যদি চাঁদের এমন আলো তার,
এ জীবনে তবে আমি ভালোবাসি সবচে’ আঁধার।
৫
অনুলিখন
বরফ-জমাট মৌনতায় গা ভিজিয়ে
বাতাস দাঁড়ায় এসে দরজার পাশে
কড়া নেড়ে ভেঙে ফেলে জাগতিক ঘুম
হিমের মোড়কে ঢাকে বিছানো বেদনা।
শব্দের ঘর্ষণে উষ্ণ হয়ে উঠি আমি
কলমের কর্ষণে না লিখেই পারি না—
বাস্পই জলের আত্মা, বরফ-টুকরো অস্থি,
দেহটা গড়িয়ে চলা দৃশ্যমান স্বস্থি।
পৃথিবীর দুঃখ বাজে আকাশের বুকে
তুষার যে ঝরে তাই তার শুষ্ক চোখে
তুষারের ফিসফিস শব্দ শুনি ফের—
জমাটবদ্ধই হোক কিংবা বাষ্পীয়ই হোক
মৌনতা নিঃসঙ্গতার কোমল সে নাম
Be the first to comment