তিনটি কবিতা
-সেলিম মিয়া
অপারগ আকুতি
পৃথিবীর সবাই ঘুমাতে গেলে আমি ঘুমাই সবার আগে
পাছে কত কথা মনে পড়ে ফেলে আসা কত অনুরাগে,
তবু অপারগ মুমূর্ষেুর পিপাসার মতো দেশে যাওয়ার বাসনা জাগে।
সমুদ্রের আত্মা ফাটা ঢেউ তীরে এসে আছড়ে আবার শান্ত হলে
তবেই না অশান্ত এ মন সাগর বেলায় ধীর পায়ে যায় চলে,
তবুও মনের ঢেউ ওঠে অবিরাম দুঃখী মাকে আবার দেখবে বলে।
জলধারা উৎসমূল থেকে ছিন্ন হয়ে আর সে পথে না ফিরলেও
একই স্থানে মিশে যেতে রাজি আমি মেঘ হয়ে ঝরলেও,
তবু ফিরে পেতে চাই ভাই-বোনের স্নেহধারা অপরিমেয়।
সব সঙ্গীতের রেশ কখনো না কখনো যদিও থেমে যায়
পুরাতন বন্ধুদের সঙ্গ-রেশ আজীবন তবুও হৃদয়ে বেজে যায়,
সে রেশ নতুন রূপে আবার বাজুক এই হৃদয়-বীণায়।
মেঠো পথে হেঁটে যে মেয়েটি ইঙ্গিতে-সঙ্গীতে বলে গেছে কত কথা
আমি সেই গোপন ভাষায় চষতে যে চাই আবার সুরের লতা,
সেই খসড়া কথায় আবার রচতে চাই না-লেখা কবিতা।
সেইসব প্রিয় মানুষেরা কবেই না হৃদয়ে নিয়েছে ঠাঁই
অন্দর-মহল থেকে এবার তাদের আমি বন্দরে দেখতে চাই,
আর চোখের দেখায় তাদেরকে আবার হৃদয়ে যেন পাই।
কোনো দিন জানবে না তুমি
কোনো দিন জানবে না তুমি—
একটি হৃদয় যতটুকু প্রেম ধরে
তার চে’ অনেক বেশি ভালবেসেছে তোমায়।
কোনো দিন বুঝবে না তুমি –
প্রেমময় নীরবতার মুখরতা
কত কথা বলে যায় বাক্যহীন।
কোনো দিন বুঝবে না তুমি—
গভীরে ভালবাসে যে হৃদয়
তাকে বুঝতে লাগে সময়,
লাগে সমান গভীরতা,
কিছু কথা, ঢের নীরবতা—
হৃদয় খুঁড়ে তা জানতে হয়।
বোঝার আগে বুঝে নিলে
এমন হৃদয় তুমি হারালে,
আর নিজের অজান্তেই কাঁদালে।
তবে জেনে রাখো— ভালবেসে
সব রাজা হয় নাকো ফকির
সব হৃদয়ে বেঁধেও না তীর।
যে হৃদয়ে বেঁধে তীর
আর যে রাজা হয় ফকির
তাদের থাকে পলি-কোমল উর্বরতা;
সহজেই যেমন চাষ করা যায়,
সহজেই তেমন নষ্ট করা যায়।
আজকাল বড় বেশি ভুল হয়
আজকাল বড় বেশি ভুল হয়!
এটা সেটা করতে গিয়ে ভুল হয়।
এমন নয় যে বয়স আমার ষাটের কোঠায়
কিংবা আমি অশীতিপর কোনো বৃদ্ধ।
ভুল হয়— তোমায় ভালবেসে ভুল করেছি বলে,
ভুল হয়— সরল বিশ্বাসে গরল পান করেছি বলে।
আজকাল খুব বেশি ভুল হয়!
প্রায় প্রতিটা কাজেই ভুল হয়।
এমন নয় যে আমি কাজে মনোযোগী নই
কিংবা কাজে ফাঁকি দেয়া আমার স্বভাব।
ভুল হয়— আমার মনটা মনের জায়গায় নেই বলে,
ভুল হয়— মনটাকে অনেক আছড়িয়েছো বলে।
আজকাল বড্ড বেশি ভুল হয়!
পথে চলতে গিয়ে ভুল হয়।
এমন নয় যে আমি পথ চিনি না
কিংবা আমি কোনো তালকানা পথচারী।
ভুল হয়— আমার আত্মাছাড়া দেহখানি পথে চলে বলে,
ভুল হয়— পথের সিগন্যালে সে দেহে কোনো সংবেদন নেই বলে।
আজকাল অনেক বেশি ভুল হয়!
কোনো কিছু পড়তে গেলে ভুল হয়।
এমন নয় যে আমি পড়তে জানি না
কিংবা চোখের দৃষ্টিশক্তি একেবারে নেই।
ভুল হয়— এ চোখ এখনো শুধু তোমাকে দেখে বলে,
ভুল হয়— এ চোখের ফ্রেমে তোমার ছবি বাঁধাই হয়ে আছে বলে।
আজকাল ঢের বেশি ভুল হয়!
কোনো কিছু শুনতে গিয়ে ভুল হয়
এমন নয় যে আমি কানে শুনি না
কিংবা আমার শ্রবণ-শক্তি কমে গিয়েছে
ভুল হয়—এ কানে এখনো তোমার কথা বাজে বলে,
ভুল হয়—এ কান তোমার বাজানো সুরে চলে বলে।
Be the first to comment