দুটি কবিতা
-সেলিম মিয়া
১
এখনো ভুল করে
এখনো ভুল করে ঘুমের ঘোরে
হাত দুটো তোমাকে ছুঁতে যায়,
শূন্যতার স্পর্শে ঘুম ভেঙ্গে যায়।
অথচ পূর্ণতার স্পর্শে আবার ঘুমানো
আমার জীবনে জ্বলে ওঠা নক্ষত্রের মতো সত্যি ছিলো!
এখনো ভুল করে দরজায় করাঘাত শুনি
তুমি ভেবে খুলতে যাই
খুলে দেখি কেউ নাই!
অথচ এক সময় তোমার জন্য দরজা খোলা
আমার জীবনে রোজকার একটা সত্যি ছিলো!
এখনো ভুল করে তোমার গন্ধ ভেসে আসে
ব্যালকনিতে দাঁড়ালে দখিনা বাতাসে
ফাগুন কিংবা চৈত্র মাসে।
অথচ এ সময় তোমার গন্ধে স্নান করা
আমার জীবনে অন্য রকম একটা সত্যি ছিলো!
এখনো ভুল করে মুঠোফোনের ইনবক্সে যাই
তুমি ছাড়া অন্য সবার মেসেজ পাই
উৎসব কিংবা বার্ষিকীর প্রাক্কালে।
অথচ এ সময় একটু দূরে থাকলে তোমার মেসেজে
আমার মুঠোফোনের ইনবক্স উছলে পড়তো!
এখনো ভুল করে কোনো কোনো রাতের আকাশ
তারায় তারায় জ্বালিয়ে রাখি আগের মতো
আর চাঁদকে বলি জোছনার চাদর বিছিয়ে দিতে।
অথচ এমন মাহেন্দ্র ক্ষণে ইচ্ছেমতো গড়াগড়ি খেলা
আমার জীবনে এক সময় বাস্তব দৃশ্য ছিলো!
২
বৃথা আয়োজন
এই যে আমি সারা বেলা এক মনে কাজ করি
মন থেকে তোমাকে ভোলার জন্য,
আর কাজের ভ্রান্তি ঘোচাতে খানিকটা বিরাম নেই;
সেই বিরামও তোমাকে মনে করিয়ে দেয় অবিরাম।
এই যে আমি মেদুর হাওয়ায় মাদুর ভরে রোদ্দুর কুড়াই
মনকে ফুরফুরে করার জন্য
সে রোদ্দুরও যদ্দূর পারে মনে করিয়ে দেয় তোমাকে।
এই যে বর্ষার বৃষ্টিতে আমি তাকাই এক দৃষ্টিতে
ভিজতে যাই না পাছে মনে পড়ে তোমাকে
সে বৃষ্টিও যেন কী ঘ্রাণে মনে করায় তোমাকে।
এই যে অসহ্য যন্ত্রণায় যখন মগজে প্রায় রক্তক্ষরণ হয়
তখন ঘুমাই আমি মগজকে বিশ্রাম দিতে
সে ঘুমও আমাকে তোমার স্বপ্নে মগ্ন করে রাখে।
এই যে কোনো কোনো নিঝুম রাতে দুঃস্বপ্নে ঘুম ভাঙে
আর আত্মাটা ছটফট করে বেরিয়ে যেতে চায়,
তখন শত চেষ্টাতেও আসে না সে ঘুম।
সে জেগে থাকাও ব্যথার বাঁশি বাজিয়ে মনে করায় তোমাকে।
এই যে আমি সকালে উঠি আবার ব্যস্ততায় সুস্থ থাকবো বলে
চোখ খুললেই তবু তোমার আস্ত ছবি ভাসে চোখের মাঝে।
এই যে আমি খোলা আকাশ দেখি ঝোলা ভরা রুদ্ধতা থেকে মুক্তির জন্য
সে আকাশও মনে করিয়ে দেয় তোমাকে।
এই যে আমি গান শুনি, কবিতা পড়ি মনের জঞ্জাল সরানোর জন্য
তারাও সুরে ও ছন্দে কাঙাল হয়ে বলে যায় তোমার কথা।
এই যে কতদিন আমি অপেক্ষা করি উপেক্ষার অবসান ঘটাতে
সে অপেক্ষাও মনে করিয়ে দেয় তোমাকে।
এই যে প্রতি মুহূর্তে আমি নিঃশ্বাস নেই বাঁচবো বলে
মাঝে মাঝে তাও দীর্ঘশ্বাস হয়ে মনে করায় তোমাকে,
আর তোমার নিঃশ্বাস হয়ে ঢুকে দীর্ঘশ্বাস হয়ে বেরোনোর গল্পকে।
এই যে তোমাকে ভোলার জন্য আমার এত আয়োজন,
তবু সবই তার তোমাকেই করায় স্মরণ।
Be the first to comment